ডেস্ক নিউজ:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ৫ বছর জেল হলেও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। তবে এজন্য তাকে উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। অার নির্বাচনের আগে এ বিষয়টির নিষ্পত্তি যদি না হয় তাহলেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই মামলায় বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারায় খালেদা জিয়াসহ বাকিদের সাজা দেয়া হয়। বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার সাজা কমানো হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করেন আদালত। কারাদণ্ডের পাশাপাশি সব আসামিকে দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এ রায়ের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা ঘৃণার সঙ্গে এ রায় প্রত্যাখ্যান করেছি। জনগণও এ রায় মেনে নেবেন না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষতা, নির্বাচন থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতে সরকার নীলনকশা তৈরি করেছে। রায়ের প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পরে সারাদেশে একযোগে বিক্ষোভ ও শনিবার সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বৎসরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে তাহলে তিনি সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন না। এই আইন অনুযায়ী খালেদা জিয়া নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তবে আপিল করলে নির্বাচনেরও সুযোগ পেতে পারেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী এবং আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু জাগো নিউজকে বলেন, খালেদার সাজাটি নিম্ন আদালত দিয়েছেন। এরপর তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তারপর আবার আপিল বিভাগে আপিল হবে। একাদশ সংসদ নির্বাচন এ বছরই হবে বলে বাস্তব অবস্থায় এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পেরিয়ে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা কম। তাই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশও নিতে পারেন। তবে নির্বাচনের পর চূড়ান্ত রায় হলে, আর সাজা বহাল থাকলে তিনি সংসদ সদস্যের পদ হারাবেন।

জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার আদেশ হয়েছে নিম্ন আদালতে। এ নিয়ে আপিল হবে। সেক্ষেত্রে বিচারাধীন অবস্থায় ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই।

জানা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ আসন থেকে এভাবেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তার ১৩ বছর সাজা হয়েছিল।

এই সাজা হওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তা উচ্চ আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের উপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেন, হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে- আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি, সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হননি, এজন্য ইলেকশন করতে পারবেন। আবার আরেকটা রায়ে আছে, পারবেন না। এখন উনার (খালেদা) ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।

আর এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম জাগো নিউজকে বলেন, উনার (খালেদা জিয়ার) নির্বাচনের অংশ নেয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালতে মীমাংসা হবে। তাই এখনো তার নির্বাচনের সুযোগ আছে। পরবর্তী পদক্ষেপ অর্থাৎ আইনি পদক্ষেপটি বলে দেবে তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ আছে কি না।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় একটি মামলা করে দুদক। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়। দশ বছর আগে মামলাটি হলেও আজ রায় হলো। তাই আপিল বিভাগেও কিছুটা সময় লাগবে বলে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ চলে যায়নি খালেদা জিয়ার।

এ মামলায় ছয়জন আসামির মধ্যে তিনজন পলাতক। তারা হলেন- বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

গত ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজ (৮ ফেব্রুয়ারি) দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৩২ জন। ১২০ কার্যদিবসের বিচারকার্য শেষ হয়েছে ২৩৬ দিনে। আত্মপক্ষ সমর্থনে সময় গেছে ২৮ দিন। যুক্তি উপস্থাপন হয়েছে ১৬ দিন এবং আসামিপক্ষ মামলাটির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে গেছেন ৩৫ বার।